খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকায় মধ্যরাতে হামলা চালিয়ে দোকানপাটে ভাঙচুর করেছে মাদক ব্যবসায়ীর লোকেরা
চট্টগ্রাম নগরের আমবাগান এলাকায় মাদকের স্পট নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে উত্তেজনার পর ওই এলাকায় মধ্যরাতে তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলা চালিয়ে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তাদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছে তিনজন।
পরে খবর পেয়ে দাঙ্গা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের নেতাসহ চারজনকে।
রোববার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে ২টা পর্যন্ত নগরের খুলশী থানাধীন আমবাগান রেলক্রসিংয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকাভিত্তিক গ্রুপগুলোর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বাঙালি বাবুসহ চারজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমবাগান রেলক্রসিংয়ের সামনে দীর্ঘদিন ধরে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন খুলশী থানার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আলমগীর। রেললাইনে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। মাদক ব্যবসায়ী আলমগীরকে সহযোগিতা করছেন কিশোর গ্যাং লিডার বিজয় চন্দ্র দে ওরফে বাঙালি বাবু নামে এলাকার এক চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মোঃ হোসেন হিরণ এবং বহিষ্কৃত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মাদক ব্যবসায়ীদের পেছনে থাকা লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা বহুবার চেষ্টা করেও এই আখড়া উচ্ছেদ করতে পারেনি। সর্বশেষ গত রোববার রাতে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের ঝামেলা হয়। পরে মাদক ব্যবসায়ী আলমগীর ও বাঙালি বাবু লোকজন জড়ো করে ধারালো ছুরি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এলাকাবাসীর ওপর হামলা চালায়। হামলায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অংশ নেয়।
এ সময় হামলাকারীরা আমবাগান বাজারে কয়েকটি দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর পর সেখানে অবস্থান নেয়। হামলাকারীদের ছুরিকাঘাতে স্থানীয় তিন যুবক আহত হন। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
আমবাগান এলাকার লোকজন বলেন, ‘আমবাগান বাজারেই গামেন্টসটি অবস্থিত। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কারখানাটি খোলা থাকে। রোববার রাতেও যথারীতি গার্মেন্টস খোলা ছিল। হঠাৎ কিরিচ, ছুরি নিয়ে বেশ কয়েক যুবক আমার কারখানাটির বাইরে দরজাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় কোপাতে থাকে। কারখানার সঙ্গে লাগোয়া আমার একটি গ্যারেজে ঢুকে সেখানে থাকা দুটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। কী কারণে হামলা চালিয়েছে আমি জানি না। আমার প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরায় হামলার ঘটনা ধরা পড়ে। তাদের কাউকে আমি চিনি না।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই মাদকের আখড়া চালু থাকার পেছনে ফাঁড়ি পুলিশেরও হাত রয়েছে। সংঘর্ষের দিন এলাকাবাসীর রোষানলে পড়েছিলেন ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ খাজা এলাহী।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘সেখানে মাদকের আখড়া চালু থাকার পেছনে পুলিশ সহযোগিতা করছে—এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’